১০ টি ঔষধি গাছের নাম ও উপকারিতা।

 ১০ টি ঔষধি গাছের নাম উপকারিতা।

 



১. তুলসী (Holy Basil)

·         সর্দি-কাশি জ্বর কমাতে সাহায্য করে।

·         রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

·         পেটের গ্যাস হজমজনিত সমস্যা দূর করে।

তুলসী একটি সুপরিচিত ঔষধি গাছ যা আয়ুর্বেদে বিশেষভাবে মূল্যবান। একে "পবিত্র গাছ" বলা হয় এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেও এর ব্যবহার রয়েছে। তুলসী পাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি সর্দি-কাশি, জ্বর, হাঁপানি গলা ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও পেটের গ্যাস, হজমের সমস্যা মানসিক চাপ কমাতে কার্যকর। তুলসী রক্ত পরিষ্কার করে, ত্বক চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। প্রতিদিন সকালে কয়েকটি তুলসী পাতা খাওয়া শরীরকে সতেজ রোগমুক্ত রাখতে সহায়ক। তাই তুলসী সত্যিই একটি অমূল্য ঔষধি গাছ।

 

২.  অ্যালোভেরা (Aloe Vera)

·         ত্বকের দাহ, ব্রণ ক্ষত সারাতে কার্যকর।

·         হজমে সহায়তা করে।

·         চুল পড়া কমায় চুল ঘন করে।

অ্যালোভেরা একটি বহুল পরিচিত ঔষধি গাছ, যাকে আমরা ঘৃতকুমারী নামেও চিনি। এর পাতা মোটা, রসালো ভেতরে স্বচ্ছ জেল জাতীয় পদার্থ থাকে, যা বহু রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। অ্যালোভেরার জেল ত্বকের দাহ, ব্রণ, দাগ ক্ষত সারাতে অত্যন্ত কার্যকর। এটি ত্বককে মসৃণ উজ্জ্বল করে এবং চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়। এছাড়াও অ্যালোভেরা হজমশক্তি বাড়ায়, লিভারের কার্যক্ষমতা উন্নত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত অ্যালোভেরা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। কারণে অ্যালোভেরা গাছকে প্রাকৃতিক ওষুধের ভাণ্ডার বলা হয়।

 

 ৩.  নীম (Neem)

·         রক্ত পরিশোধন করে।

·         ত্বকের চুলকানি, একজিমা ব্রণ সারাতে ব্যবহৃত হয়।

·         দাঁতের রোগ প্রতিরোধ করে।

নিম গাছ একটি অতি উপকারী ঔষধি গাছ, যা প্রাচীনকাল থেকেই ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর পাতা, ডাল, ছাল ফল সবই সমানভাবে উপকারী। নিম পাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে, যা ত্বকের চুলকানি, ব্রণ, একজিমা ফোড়া সারাতে সাহায্য করে। দাঁতের যত্নে নিমের ডাল দিয়ে মাজার প্রচলন রয়েছে, যা দাঁত মাড়িকে মজবুত রাখে। নিম পাতা রক্ত পরিষ্কার করে এবং শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখে। এছাড়াও এটি জ্বর, ডায়াবেটিস চুলের খুশকি প্রতিরোধে কার্যকর। তাই নিম গাছকে প্রকৃতির এক অমূল্য ভেষজ সম্পদ বলা হয়।

 

 ৪. আদা (Ginger)

·         হজমে সহায়তা করে।

·         সর্দি-কাশি গলা ব্যথায় কার্যকর।

·         বমি বমি ভাব কমায়।

আদা একটি সুপরিচিত ভেষজ মসলা জাতীয় গাছ, যা মূলত এর কন্দ বা মূলের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি রান্নায় স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসায় কার্যকর। আদায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহনাশক উপাদান রয়েছে, যা সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা জ্বর কমাতে সাহায্য করে। হজমের সমস্যা, বমি বমি ভাব গ্যাস্ট্রিক দূর করতেও আদা বিশেষভাবে উপকারী। এছাড়াও রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি শরীর গরম রাখতে এটি সহায়ক। আদা নিয়মিত খাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে সতেজ রাখে। তাই আদা গাছ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি অপরিহার্য ঔষধি গাছ।

 

৫.  হলুদ (Turmeric)

·         প্রদাহ ব্যথা কমায়।

·         ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

·         লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

হলুদ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি মসলা জাতীয় গাছ, যা মূলত এর কন্দ বা মূল থেকেই প্রাপ্ত হয়। এতে কারকিউমিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহনাশক উপাদান থাকে, যা শরীরের প্রদাহ ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। হলুদ ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয়, ব্রণ দাগ দূর করতে সহায়ক। এটি লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং রক্ত শোধন করে। রান্নায় হলুদের ব্যবহার খাবারের স্বাদ রঙ বাড়ায়। এছাড়াও এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হজমে সহায়ক। হলুদ গাছ প্রকৃতির এক অমূল্য ঔষধি সম্পদ।

 

৬. কালোজিরা (Black Seed)

·         রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

·         ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

·         গ্যাস্ট্রিক পেটের সমস্যা কমায়।

কালোজিরা, যা কালো বীজ বা নাইজেলা সাটিভা নামে পরিচিত, একটি মূল্যবান ঔষধি উদ্ভিদ। এর বীজে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রয়েছে। কালোজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শ্বাসকষ্ট হাঁপানি কমাতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং হজমের সমস্যাও দূর করে। কালোজিরা ত্বক চুলের যত্নে ব্যবহৃত হয় এবং রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যবহার করলে শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শরীর সুস্থ থাকে। তাই কালোজিরা গাছকেপ্রাকৃতিক ওষুধের ভাণ্ডারবলা যায়।

 

৭.  পুদিনা (Mint)

·         পেটের গ্যাস, হজম সমস্যা দূর করে।

·         মাথাব্যথা কমায়।

·         শ্বাস প্রশ্বাস সতেজ রাখে।

পুদিনা একটি সুগন্ধি ঔষধি গাছ, যা কাঁচা বা সস হিসেবে রান্নায় ব্যবহৃত হয়। এতে মেন্টল নামক উপাদান থাকে, যা হজমে সহায়ক এবং পেটের গ্যাস কোলিক কমায়। পুদিনার পাতা চা বা রস হিসাবে খেলে মাথাব্যথা, সর্দি-কাশি গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এটি শ্বাস-প্রশ্বাসকে সতেজ রাখে এবং ত্বককে ঠান্ডা সতেজ রাখে। মানসিক চাপ উদ্বেগ কমাতেও পুদিনার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত পুদিনা খেলে শরীর মস্তিষ্ক উভয়ই সতেজ থাকে। তাই পুদিনা গাছকে একটি প্রাকৃতিক ঔষধি গাছ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

 

 ৮.  গোলাপ (Rose)

·         গোলাপ জল চোখের জ্বালা কমায়।

·         ত্বককে সতেজ রাখে।

·         মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে।

গোলাপ একটি সুপরিচিত সৌন্দর্যবর্ধক ঔষধি গাছ, যা প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের স্বাস্থ্য সৌন্দর্যের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর ফুল থেকে গোলাপ জল তৈরি হয়, যা চোখের জ্বালা কমায়, ত্বককে নরম উজ্জ্বল রাখে এবং মানসিক চাপ হ্রাস করতে সাহায্য করে। গোলাপের পাপড়ি চা বা अर्क হিসেবে খেলে দেহকে সতেজ রাখে এবং রক্ত পরিশোধনে সহায়ক। এটি হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে পেশী শিথিল করতে সহায়ক। নিয়মিত গোলাপ ব্যবহার শরীর মন দুটোই শান্ত রাখে। তাই গোলাপ গাছকে প্রকৃতির এক অমূল্য ঔষধি উপহার বলা যায়।

৯.  আমলকি (Indian Gooseberry)

·         ভিটামিন-সি এর সমৃদ্ধ উৎস।

·         রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

·         চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে চুল পড়া রোধ করে।

আমলকি, যা ভারতীয় আঙ্গুর নামে পরিচিত, একটি অতি উপকারী ঔষধি গাছ। এটি ভিটামিন সি এর অন্যতম সমৃদ্ধ উৎস, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে সুস্থ রাখে। আমলকি নিয়মিত খেলে ঠান্ডা, কাশি জ্বর কমায়। এটি হজমে সহায়ক, লিভারকে শক্তিশালী করে এবং রক্ত পরিশোধনে সাহায্য করে। চুল ত্বকের স্বাস্থ্যও উন্নত করে। আমলকি চা, জুস বা শুকনো ফল হিসেবে খাওয়া যায়। কারণে আমলকি গাছকেস্বাস্থ্যবর্ধক ঔষধি গাছবলা হয় এবং এটি আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

 ১০. অশ্বগন্ধা (Ashwagandha)

·         মানসিক চাপ উদ্বেগ কমায়।

·         শক্তি স্ট্যামিনা বাড়ায়।

·         নিদ্রাহীনতা দূর করে।

অশ্বগন্ধা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি গাছ, যা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর মূল পাতা থেকে বিভিন্ন ঔষধি উপাদান পাওয়া যায়, যা শরীর মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অশ্বগন্ধা মানসিক চাপ উদ্বেগ কমায়, নিদ্রাহীনতা দূর করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। এটি শরীরের শক্তি স্ট্যামিনা বৃদ্ধি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে। নিয়মিত ব্যবহার করলে রক্তচাপ শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। অশ্বগন্ধা গাছকে প্রাকৃতিক ওষুধের একটি অমূল্য উৎস হিসেবে ধরা হয়, যা দৈনন্দিন জীবনে সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।



বড় বড় ব্যাধি ভালো করার জন্য এই গাছগুলোর বিকল্প নেই।


 

 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জোবায়ের ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url