হানিনাট খাওয়ার উপকারিতা
হানিনাট হলো মূলত বিভিন্ন জাতের বাদামের মিশ্রণের সাথে মধু মিশ্রিত একটি পুষ্টিকর
খাদ্য।যাতে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, জিংক ইত্যাদির মিশ্রণ থাকে।যার ফলে
এটি শরীরের জন্য খুবই উপকারী।যদিও ড্রাই ফুড বেশি বেশি খেলে শরীরের পেশী শক্তি
বাড়ে।তার ওপর আবার এর সাথে মধু মিশিয়ে এর সাদের পাশাপাশি এর গুণগত মান রক্ষা
করা হয়
পোষ্ট সূচিপত্রঃ হানিনাট খাওয়ার উপকারিতা
হানিনাটস তৈরির জন্য উপকরণ
এটি তৈরি করতে অনেক ড্রায় ফুডের প্রয়োজন হয়। তাই যদি কেউ হানিনাট তৈরি করতে
চায়, তাহলে মোটামুটি ১৫ প্রকারের ড্রাইফুড প্রয়োজন হবে।
১. কাঠবাদাম
২. কাজুবাদাম
৩. পেস্তা বাদাম
৪. আখরোট
৬. চিনা বাদাম
৭. হ্যাজেলনাট
৮. তীনফল
৯. মধু
১০. দারচিনি
১১. তিল
১২. বাটার ঘি
১৩. চিনি
১৪. লবণ
১৫. কাচের বয়াম
এই ১৫ টি উপকরণ হলে পিওর হানিনাট তৈরি করা সম্ভব। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এই
উপকরণগুলোতে যেন কোনরকম ঝামেলা না থাকে। ঝামেলা বলতে পচা, পোকাতে খাওয়া
ইত্যাদি। তাহলে এই দ্রব্যের মিশ্রণগুলো থেকে ভালো পরিমাণ ফলাফল পাওয়া যাবে।
হানিনাটস খাওয়ার উপকারিতা
হানিনাট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা উচিত। মধু মিশ্রিত বাদাম খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে, হৃদরোগ হয় না, শরীরের শক্তি
বৃদ্ধি হয়, শারীরিক চাপ কমায়, শরীরের ত্বক ভালো থাকে, চুল ভালো থাকে, রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সহজে ওজন বাড়ে না ইত্যাদি।
শুধু এতোটুকুই না, হানিনাট খাওয়ার উপকারিতা গুনে শেষ করা যাবে না। বিশেষ করে পুরুষের জন্য
এটি খুবই উপকারী একটি খাদ্য। সারাদিন পরিশ্রম করে আসার পর, যে ক্লান্তি অনুভব
হয় সেই ক্লান্তি দূর করার এক মহা ঔষধ এই হানিনাট। বিশেষ করে মধু ও বাদাম
দুটি প্রাকৃতিক শক্তির অধিকারী খাবার। সকালবেলা মনকে চনমনে রাখতে এটি খুবই
উপকারী।
পরিমিত এটি খেলে, অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে। যার ফলে বাড়তি খাবার খাওয়ার
প্রয়োজন হয় না। যার কারনে শরীরের ওজন দ্রুত কমে। তাই আমাদের শরীর ও মনকে
সুস্থ রাখতে নিয়মিত হানিনাট খাওয়া উচিত। যদি আমরা নিয়মিত খাই, তাহলে আমরা
সব সময় সুস্থ থাকতে পারবো। ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়বো না। তাই প্রত্যেকটি
মানুষের দৈনন্দিন খাওয়ার লিস্টে হানিনাট রাখা উচিত।
ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য হানিনাটস খাওয়ার নিয়ম কি?
ডায়াবেটিসের রোগীরা মধু মিশ্রিত বাদাম খেতে পারবেন তবে কিছু নির্দিষ্ট
নিয়ম রয়েছে। অবশ্যই আপনাকে নিয়ম মেনে মধু মিশ্রিত বাদাম সেবন করতে হবে।
ডায়াবেটিসের রোগীদের মধু মিশ্রিত বাদাম সেবন করার সবচেয়ে ভালো সময় হলো
সকালবেলা নাস্তার পর অথবা বিকেল বেলা ক্ষুধা লাগলে। তবে অবশ্যই মাথায়
রাখতে হবে, এটা খালি পেটে সেবন করা যাবে না। খালি পেটে সেবন করলে আপনার
রক্তের গ্লুকোজ দ্রুত বেড়ে যাবে।
তাই অবশ্যই কিছু খাওয়ার পর এটা সেবন করতে হবে। তবে ডায়াবেটিসের রোগীদের
জন্য সতর্কবার্তা, আপনি যে মধুটা পান করবেন সেটা অবশ্যই পিওর মধু হতে হবে।
যদি সেটা চিনি মিশ্রিত মধু হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনার সমস্যা হবে। তাই
বাজার থেকে মধু কেনার আগে অবশ্যই সতর্ক থাকুন। আবার বিশুদ্ধ মধু হলেই যে
বেশি খেয়ে ফেলবেন তা কিন্তু না, অবশ্যই আপনাকে নিয়ম মেনে এক চামচ মধু পান
করতে হবে।
এক চামচের বেশি মধু পান করলে, আপনার রক্তের গ্লুকোজ দ্রুত বেড়ে যেতে পারে।
তাই অতি সাবধানে নিয়ম মেনে আপনাকে মধু মিশ্রিত বাদাম সেবন করতে হবে।
ছোট বাচ্চাদের মধু মিশ্রিত বাদাম খাওয়ানোর নিয়ম
- এক বছর বয়সের নিচের শিশুদের কখনোই মধু মিশ্রিত বাদাম খাওয়ানো উচিত নয়। তাদের হজমে সমস্যা হবে। তাছাড়া আরো অন্যান্য সংক্রমণ হতে পারে। এক্ষেত্রে মায়ের দুধের বিকল্প কিছু নেই।
- বাচ্চার বয়স যদি এক থেকে তিন বছরের মধ্যে হয়, সেক্ষেত্রে খুবই সামান্য পরিমাণ খাওয়ানো যেতে পারে। তবে অবশ্যই বাদাম গুড়া করতে হবে। হাফ চামচ খাটি মধু মিশাতে হবে। মধু অবশ্যই খাঁটি হতে হবে। যদি চিনি মিশ্রিত মধু হয়, তাহলে বাচ্চার সমস্যা হতে পারে। সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
- চার থেকে সাত বছরের বাচ্চার ক্ষেত্রে তাদের খাওয়ানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে না। বরং সকালে নাস্তার সময় এবং বিকেল বেলা, এক চামচ খাটি মধু খাওয়ালে বাচ্চার ব্রেন ও মনোযোগ দুটাই বাড়বে।
- ৮ থেকে ১০ বছরের বাচ্চার জন্য এটাতে কোন রিক্স নেই। তবে তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ মতো খাওয়াতে হবে। তাহলে তাদের ব্রেন ও মনোযোগ দুটো বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে আগ্রহ জাগবে এবং কঠোর পরিশ্রম করলেও ক্লান্তি আসবে না। তাই একজন পরিপক্ক মায়ের উচিত, তার সন্তানকে মধু মিশ্রিত বাদাম ছোটবেলা থেকে খাওয়ানোর অভ্যাস করানো।
তবে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। উপরের নির্দেশনা যেন কোনভাবে ভুল না হয়।
তাহলে আপনার সন্তান বা নবজাতকের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। মনে রাখবেন, একটি
দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। তাই, বিশেষ করে মায়েদের অবশ্যই এসব বিষয়ে
সতর্ক থাকতে হবে। হানিনাট খাওয়ার উপকারিতা গুনে শেষ করা যাবে না তবে একটু সতর্ক থাকতে হবে।
শীতের সময় হানিনাট খাওয়ার উপকারিতা
শীতের সময় হানিনাট খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। এটি শরীরকে ভেতর
থেকে গরম রাখে। যার কারণে শরীরে বেশি শীত লাগতে পারে না। আমাদের পেশিগুলো
সতেজ থাকে। আমরা কাজে মনোযোগ দিতে পারি। মন ফুরফুরে থাকে। শরীরে প্রচুর
পরিমাণ শক্তি আসে।
যার কারনে শীতের সময় হানিনাট খাওয়ার উপকারি। মধু আমাদের শরীরকে
ভেতর থেকে গরম রাখে এবং বাদাম আমাদের শক্তি যোগায়। শীতের সময় আমাদের
অনেকের ঠোঁট ফাটে, হাত পা ফেটে যায়। মধু মিশ্রিত বাদাম সেবন করলে
মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বাতাসের জলীয় বাষ্পকে শরীরে লাগতে দেয় না।
যার কারণে আমাদের হাত, পা, ঠোঁট ফেটে যায় না।
শীতের সময় আমাদের প্রায়শই গলা ব্যথা, কাশি এই দুইটা রোগ লেগেই থাকে। মধু
মিশ্রিত বাদাম সেবন করলে, কখনোই এই দুইটা রোগ আপনাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
মধু আপনার শরীরের এই দুইটা উপকার নিশ্চিতভাবে করবে। তবে সাধারণ সময়ের
তুলনায়, শীতকালে আপনাকে তুলনামূলক বেশি মধু মিশ্রিত বাদাম সেবন করতে হবে।
কারন শীতকালে ঠান্ডা বেশি থাকে, এ সময় শরীর-মধু এবং বাদাম কে সঠিকভাবে
ধারণ করে নিতে পারে। তাই শীতকালে, তুলনামূলক বেশি মধু পান করলে আমাদের শরীর
সুস্থ থাকে।
লেখকের মন্তব্য
মধু মিশ্রিত বাদাম খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। তবে আমরা অনেক সময়
মাত্রাতিরিক্ত সেবন করে থাকি। যার কারনে, অনেক সময় আমাদের হার্ডের
সমস্যা হতে পারে।
তাই এটি সেবন করা নিয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। পরিমাণের চেয়ে বেশি
সেবন করা যাবে না। তাহলে এটি ক্ষতির কারণ হতে পারে।
আমাদের উচিত এটি সঠিক পরিমাণে সেবন করা। তাহলে আমরা সুস্থ থাকতে পারবো।
শরীরে কোন ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে না। বরং আমরা আরো সুস্থ থাকতে পারবো। হানিনাট খাওয়ার উপকারিতা আরও অনেক রয়েছে যা বলে শেষ করা যাবে না।
জোবায়ের ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url