ভারতবর্ষের ইসলাম ধর্ম পুরোপুরিভাবে প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
ভারত নানা সময় নানান শাসক দিয়ে শাসিত হলেও, ভারতবর্ষে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়েছে
১১৯২ সালে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের মাধ্যমে। তার আগে ভারতবর্ষ ছিল হিন্দু রাজাদের
অধীনে। যাদের কোনো আইন বা নিয়ম কানুন ছিল না। অন্যায় অত্যাচার করা ছিল তাদের মূল
লক্ষ্য।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ ভারতবর্ষের ইসলাম ধর্ম পুরোপুরিভাবে প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
- ইসলাম আসার পূর্বে ভারতবর্ষের অবস্থা
- মোহাম্মদ বিন কাসেমের সিন্ধু বিজয়
- গজনবী সুলতান মাহমুদের ১৭ বার ভারত আক্রমণ
- মোহাম্মদ ঘুড়ির ভারত অভিযান
- ১১৯১ সালের তরাইনের প্রথম যুদ্ধ
- ১১৯২ সালের তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ
- মোহাম্মদ ঘুরির আফগানিস্তানে ফিরে যাওয়া এবং কুতুবউদ্দিন আইবেগের দিল্লি সালতানাতের প্রতিষ্ঠা
- লেখকের মন্তব্য
ইসলাম আসার পূর্বে ভারতবর্ষের অবস্থা
৭১২ খ্রিস্টাব্দে উত্তর-পশ্চিম ভারত অর্থাৎ সিন্ধু অঞ্চলের রাজা ছিল দাহির।
উত্তর ভারত অর্থাৎ কৌনজের রাজা ছিল যশোবর্মা আর দক্ষিণ ভারতে চলছিল কিছু
ভিন্ন ভিন্ন রাজার শাসন। এসব জায়গায় শাসন ছিল শাসকও ছিল কিন্তু ছিল না শুধু
মানবিকতা। এসব রাজারা মূর্তি বানিয়ে সেই মূর্তির পূজায় লিপ্ত ছিল। প্রজাদের
কোন অধিকার ছিল না সেই সময়ের ভারতবর্ষে। সাধারণ প্রজারা জমিদার আর
রাজকর্মচারীদের দ্বারা সব সময় নির্যাতিত হতো। তাদের উপর সব সময় অতিরিক্ত
খাজনা চাপিয়ে দেওয়া হতো। যার কারনে সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে এসেছিল দুঃসহ
যন্ত্রণা।
শাসকেরা নারী আর মূর্তি পূজায় লিপ্ত ছিল। তবে সেই সময়ে, কিছু লোকের
অধিকার ছিল আকাশচুম্বী। তারা হলেন ব্রাহ্মণ জাতি। সে সময় ব্রাহ্মণ জাতি ছিল
হিন্দুদের সব থেকে সম্মানের জাত বা উঁচু জাত। তাই তারা যা বলতো রাজারাও তা
করতে বাধ্য থাকতো। রাজপরিবার, ব্রাহ্মণ জাত, আর রাজ দরবারের উচ্চপদস্থ
ব্যক্তি ব্যতীত কারো তেমন কোন মূল্য ছিল না। সে সময়ের রাজারা প্রজাদের উপর
অন্যায় অত্যাচার করতো প্রচুর। নারী মদ্যপান ইত্যাদি আমোদ ফুর্তি নিয়ে
ব্যস্ত ছিল রাজারা। যার কারণে সে সময় ডাকাত, জলদস্যু, আরো বিভিন্ন সংগঠন
তৈরি হয়ে যায়। তারা সাধারন মানুষের জান মালের হুমকির কারণ হয়ে ওঠে। মূলত
সব সংগঠনের নেতৃত্ব দিত রাজ দরবারেরই কিছু উচ্চপদস্থ ব্যাক্তি। তারা জানতো যে
তারা এসব অপকর্ম করলে কিছুই হবে না, কারণ রাজা আমোদ ফুর্তি নিয়ে সবসময়
ব্যস্ত থাকতো।
সে সময় ডাকাতেরা সাধারণ প্রজাদের বাড়িতে ডাকাতি করতো। কিন্তু সেটার কোন বিচার
হতো না। জলদস্যুরা আরব বণিকদের ওপর হঠাৎ হামলা চালিয়ে তাদের ব্যবসার সামগ্রী
কেড়ে নিত। তাদের ব্যবসার মূলধন কেড়ে নিত। এক্ষেত্রে অনেকবার আরব নেতারা
ভারতবর্ষে চিঠি প্রেরণ করলেও ভারতবর্ষের রাজারা কোন আগ্রহ দেখায়নি তা প্রতিরোধ
করতে। সব মিলিয়ে বলতে গেলে, ভারতবর্ষের তৎকালীন অবস্থা ছিল আইয়ামে জাহেলিয়া
যুগের মত। সাধারণ মানুষের মতামতের কোন মূল্য ছিল না। তারা ছিল নির্যাতিত,
নিপীড়িত। ব্রাহ্মণ জাত ও রাজ দরবারের কিছু লোকেরা ছিল আসম্ভব ধ্বনি। কিন্তু
সাধারণ লোক খেতে পেতো না। তারা না খেয়ে মারা যেত।
তৎকালীন সময়ে ভারতবর্ষে অনেক বড় বড় মন্দির ছিল। সে মন্দির গুলোতে প্রচুর
সম্পদ পড়ে থাকত। এমন কি রাজারা তাদের কন্যাদের দিয়ে আসতেন সেসব মন্দিরের
সেবা করার জন্য। সাধারণ জনগণের কিশোর বয়সের ছেলেমেয়েদের তুলে নিয়ে আসা
হতো, সেই মন্দিরে বলি দেওয়ার জন্য। সাধারণ মানুষের জীবনের কোন মূল্যই ছিল
না। এক কথায় বলতে গেলে, তৎকালীন ভারতের অবস্থা ছিল আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের
মত।
মোহাম্মদ বিন কাসেমের সিন্ধু বিজয়
তৎকালীন উমাইয়া খিলাফতের শাসন চলছিল আরবে। আর সেসময় উমাইয়া খলিফা ছিলেন আল
ওয়ালিদ। খলিফা আল ওয়ালিদের অধীনে আরবের পূর্বাঞ্চলীয় শাসক অর্থাৎ বর্তমান
ইরাকের শাসক ছিলেন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ। তাদের শাসনকালে কিছু আরব বণিক ব্যবসা
করে ফিরছিলেন ভারত সাগর হয়ে। কিন্তু হঠাৎ তাদের জাহাজে কিছু ভারতের সিন্ধু
প্রদেশের জলদস্যু তাদের উপর আক্রমণ চালায়। জাহাজের কিছু সদস্যদের নিয়ে
যাওয়া হয় গভীর জঙ্গলে। কিছু লোক পালিয়ে বাঁচে। এরকম অবস্থায় এক নারী
হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর কাছে এক হৃদয়বিদারক চিঠি লেখে। যেই চিঠি পড়ে স্বয়ং
খলিফা আল ওয়ালীদও কেঁদেছিলেন। সে চিঠিতে লেখা ছিল, হে হাজ্জাজ আমাদের রক্ষা
করো,
আমাদের সাহায্য কর, জলদস্যুরা আমাদের বন্দি করেছে, আমরা মুসলিম নারী, আমাদের
রক্ষা করো।
এই চিঠি পড়ার পর, হাজ্জাজ বিন ইউসুফ খুব ক্ষুব্ধ হন। তিনি সাথে সাথে সে চিঠি
খলিফার নিকট প্রেরণ করেন। খলিফার নিকট সেই চিঠি প্রদান করা হলে, খলিফা সেই
চিঠি পড়ে কন্দনরত হয়ে যান এবং তৎক্ষণাৎ হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে সিন্ধু
অভিযানের নির্দেশ দেন। তখন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তার আপন ভাতিজা মোহাম্মদ বিন
কাশেমের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ হাজার সৈনিক একটি বহর সিন্ধুর দিকে পাঠায়। এবং
মুহাম্মদ বিন কাসেম কিছুদিনের মধ্যে সিন্ধু নদী পার হয়ে সিন্ধুতে পৌঁছায়।
মুসলমানদের ১২ সৈন্যের বিপরীতে রাজা দাহিরের ৩৪ হাজার সৈন্য অপেক্ষা
করছিল।কিন্তু বীর মুসলিম সেনা আর আরবদের উন্নত যুদ্ধ কৌশল সবমিলিয়ে মোহাম্মদ
বিন কাসেম সিন্ধু বিজয় করেন এবং রাজা দাহির নিহত হয়।
এটাই সর্বপ্রথম কোন মুসলিম সেনাপতির ভারতবর্ষ বিজয়ের ইতিহাস। তবে উমাইয়া
খিলাফত ও আব্বাসী খিলাফতের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারণে ভারতবর্ষে বেশি দিন
মুসলিম শাসন টিকে রাখা সম্ভব হয়নি। যার কারনে ৫০ বছরের মধ্যে আবার সিন্ধু
হিন্দুদের হাতে চলে যায়।
আরো পড়ুনঃ
হানিনাটস খাওয়ার উপকারিতা
গজনবী সুলতান মাহমুদের ১৭ বার ভারত আক্রমণ
আফগানিস্তানের গাজনি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সবুক্তগীনের ছেলে সুলতান
মাহমুদ। সুলতান মাহমুদের আসল নাম ছিল, ইয়ামিন উদ-দৌলা আবুল কাশিম
মাহমুদ ইবনে সবুক্তগীন। ছোটবেলা থেকে তিনি ছিলেন দুরন্ত। তিনি ইতিহাসের প্রথম
মুসলিম শাসক ছিলেন যিনি সুলতান উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ভারত আক্রমণের
জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তিনি ৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে বাবা সবুক্তগীনের মৃত্যুর পর
ক্ষমতায় বসেন।
তিনি ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেন এবং ১৭ বারই তিনি বিজয় লাভ করেন। কিন্তু তিনি
ভারতবর্ষ কখনো শাসন করেননি, তিনি শুধু ভারতের আক্রমণ চালিয়ে সেখানকার
ধনসম্পদ লুট করে নিয়ে আসতেন। তিনি মূলত চেয়েছিলেন তার সাম্রাজ্য গাজনিকে এক
সম্পদময় সাম্রাজ্যে পরিণত করতে। তবে ইতিহাসে তিনি লুটেরা সম্রাট নামে বেশি
পরিচিত।
সুলতান মাহমুদের বিশেষ কয়েকটি অভিযান
- ১০০১ খ্রিস্টাব্দে রাজা জয়পালের বিরুদ্ধে তার প্রথম অভিযান শুরু। তিনি পেশোয়ারে এক অতর্কিত হামলা চালান এবং রাজা জয়পাল কে পরাজিত করেন এবং তাকে বন্দী করেন
- ১০০৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি আবারো ভারতে আক্রমণ চালান। এবারের স্থান ভাটি অঞ্চল অর্থাৎ বর্তমানে যেটা ভারতের পাঞ্জাব। এবং এবার তার প্রতিপক্ষ ছিল রাজা জয়পালের ছেলে আনন্দ পাল। তিনি আনন্দপালকেও পরাজিত করেন এবং পাঞ্জাব থেকে প্রচুর পরিমাণ ধন সম্পদ নিয়ে যান।
- ১০১৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি আবার ভারতে আসেন। এবার মথুরা এবং কৌনজে হামলা চালিয়ে অসংখ্য মন্দির ধ্বংস করেন এবং গজনীতে বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ নিয়ে যান।
- ১০২৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি গ্বালিয়র অভিযান চালান। এবং সেখানকার স্থানীয় রাজাকে কর দিতে বাধ্য করেন এবং উত্তর ভারতে নিজের প্রভাব বিস্তার করেন।
- ১০২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি গুজরাটের সোমনাথ মন্দিরে অভিযান চালান। সেখান থেকে তিনি প্রচুর পরিমাণ অর্থ সম্পদ লাভ করেন এবং সেটি তার নিজ শহর গাজনীতে নিয়ে যান।
তবে তিনি এতবার ভারত আক্রমণ করে বিজয় করার পরও, কেন তিনি ভারতে ইসলাম প্রচার
করেননি। অনেক ইতিহাসবিদের মতে তিনি ভারত থেকে শুধু সম্পদ লুট করতে আক্রমণ
করেছিলেন।
মোহাম্মদ ঘুড়ির ভারত অভিযান
১১৪৯ খ্রিস্টাব্দে আফগানিস্তানের ঘোর অঞ্চলে ইতিহাসের বিখ্যাত এক মহান
সেনাপতির জন্ম হয়। তার নাম গিয়াস উদ্দিন মোহাম্মদ ঘুড়ি। তিনি মঈজ উদ্দিন
মোহাম্মদ সাম নামেও পরিচিত। তিনি এমন একজন সেনাপতি যাকে ভারতবর্ষের
মুসলমানেরা সারা জীবন সম্মানের সাথে স্মরণ করবে। তিনি ভারতবর্ষে পরিপূর্ণভাবে
ইসলাম প্রতিষ্ঠাকারি।
মোহাম্মদ ঘুড়ি তার আপন বড় ভাইকে নিজ সাম্রাজ্যের দায়িত্ব দিয়ে তিনি সারা
জীবন শুধু যুদ্ধ করেছেন। তার ইচ্ছা ছিল ভারতবর্ষে পরিপূর্ণভাবে ইসলাম ধর্মকে
প্রতিষ্ঠা করবেন এবং পরবর্তীতে তিনি তা করে দেখিয়েছিলেন।
কারণ তৎকালীন ভারতের রাজারা প্রজাদের উপর অন্যায় অত্যাচার আর যে পরিমান
নির্যাতনের চালাতেন তা কখনো কোন মানবতাবাদী শাসক পছন্দ করতে পারে না। তাই
মোহাম্মদ ঘুড়ি শপথ করেন তিনি ভারত আক্রমণ করবেন এবং ভারতে ইসলামের পতাকা
উড়াবেন। যেমন কথা তেমন কাজ। তিনি অন্যায় অত্যাচারে জর্জরিত ভারতবর্ষে
শান্তির ধর্ম ইসলামের পতাকা উড়িয়েছিলেন এবং পরিপূর্ণভাবে তা প্রতিষ্ঠিত
করেছিলেন।
১১৯১ সালের তরাইনের প্রথম যুদ্ধ
১১৯১ খ্রিস্টাব্দে মোহাম্মদ ঘুরি এক লক্ষ সেনাবাহিনীর একটি দল নিয়ে ভারতের
দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হন। উদ্দেশ্য ছিল দিল্লির চৌহান বংশের রাজা
পৃথ্বীরাজকে পরাজিত করে পুরো ভারতবর্ষের ইসলামের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
পৃথ্বীরাজের দুই লক্ষ বাহিনীর বিপরীতে মোহাম্মদ ঘুরির এক লক্ষ বিশ হাজার
সৈন্য। কিন্তু মোহাম্মদ ঘুরি তবুও মনোবল হারাননি। তার এক লক্ষ বিশ হাজার
সৈনিকের মধ্যে অস্বারোহী, তীরন্দাজ, কিছু হাতি এবং পদাতিক বাহিনী ছিল।
অবশেষে তরাইনের ময়দানে শুরু হলো যুদ্ধ। যুদ্ধে প্রথম পর্যায়ে মোহাম্মদ ঘুরি
এগিয়ে থাকলেও পৃথ্বীরাজের পদাতিক বাহিনীর কাছে পিছু হটতে বাধ্য হয় মুসলিম
সেনারা। এবং ফলাফল স্বরূপ সেই যুদ্ধে মোহাম্মদ ঘুরি হেরে যান এবং তিনি
কোনভাবে জীবন নিয়ে ঘোরে ফিরে আসেন।
১১৯২ সালের তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ
১১৯১ সালের সেই দুঃস্বপ্নের কথা ভুলে মোহাম্মদ ঘুড়ি আবার সেনা বাড়াতে
শুরু করেন তার দলে। আগের যুদ্ধে যে সেনাপতিরা পিছু হটেছিল তাদেরকে শাস্তি
দেন মোহাম্মদ ঘুড়ি।
এবার মোহাম্মদ ঘুড়ির দলে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার সৈন্যের একটি বিরাট বহর
ছিল। তাতে ছিল অভিজ্ঞ অশ্বারোহী, তীরন্দাজ, তুর্কি ও আফগান যোদ্ধা
দ্রুতগামী অশ্বসেনা ছিল প্রধান শক্তি। বিপরীতে পৃথ্বীরাজের ২ লক্ষ ৫০ হাজার
সৈন্যের বহর অপেক্ষা করছিল তরাইনের ময়দানে মোহাম্মদ ঘুরির জন্য।
তবে এসবের তোয়াক্কা না করে, প্রথম পর্যায়ে প্রবল আক্রমণ চালায় মোহাম্মদ
ঘুড়ির দল। মোহাম্মদ ঘুড়ির দলে অভিজ্ঞ তুর্কি যুদ্ধাদের উপস্থিতি মোহাম্মদ
ঘুড়ির জন্য বিরাট সাফল্য এনে দেন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে পৃথ্বীরাজ জখম হয়ে
মুসলিম সেনাদের হাতে বন্দি হয়। তখন ভারতীয় সেনাদের মনোবল দুর্বল হয়ে
যায় এবং ফলস্বরূপ তারা তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে হেরে যায় এবং শুরু হয়
মুসলমানদের এক নতুন ইতিহাস।
মোহাম্মদ ঘুরির আফগানিস্তানে ফিরে যাওয়া এবং কুতুবউদ্দিন আইবেগের দিল্লি সালতানাতের প্রতিষ্ঠা
তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে বিজয়ের পর মোহাম্মদ ঘুড়ি তার সব থেকে কাছের
সেনাপতি কুতুবউদ্দিন আইবেগের কাছে দিল্লির শাসনভার তুলে দেন। মোহাম্মদ ঘুরি
ফিরে যান নিজ মাতৃভূমি ঘোরে। সেখান থেকে শুরু হয় ইসলামের নতুন এক শাসকের
যাত্রা।
কুতুবউদ্দিন আইবেগ তৈরি করেন দিল্লি সালতানাত নামক নতুন এক নবাবী বংশ। এই
দিল্লি সালতানাত পরবর্তী ৩২০ বছর ভারত শাসন করেন এবং এসব সুলতানেরা ভারতের
আনাচে-কানাচে ইসলাম ধর্মের প্রচার চালান। ভারতবর্ষ শাসনকারী প্রথম কোন
মুসলিম রাজবংশ তারাই। যে রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা কুতুব উদ্দিন আইবেগ।
পরবর্তীতে ভারতের বিভিন্ন রাজাদের বশ্যতা স্বীকার এবং কর প্রদানে ব্যাখ্যা
করেন দিল্লি সালতানাতের সুলতানেরা। তারপরে ১৫২৬ সাল পর্যন্ত দিল্লি
সালতানাতের শেষ শাসক ইব্রাহিম লোদী দিল্লিকে শাসন করেন। পরবর্তীতে ১৫২৬
সালে মুঘল সম্রাট বাবর দিল্লি আক্রমণ করেন এবং নতুন করে মুঘল সাম্রাজ্য
প্রতিষ্ঠা করেন।
লেখকের মন্তব্য
আমরা মুসলমান, আমাদের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত। কেমন ছিলেন তারা। কেমন ছিল তাদের ঈমান। তাদের কাছে সব অসম্ভব কাজে সম্ভব হয়েছিল।
কারণ ছিল একটাই, আমাদের পূর্বপুরুষদের ঈমান ছিল পাথরের মতো মজবুত। তারা একবার যেটা করার কথা ভাবতো, সেটা তারা করেই ছাড়তো। কারণ ছিল একটাই তাদের ঈমান ছিল মজবুত, এক আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত কাউকে তারা সমীহ করতো না।
কেমন ছিল আমাদের পূর্বপুরুষের ঈমান আর কেমন হয়েছি আমরা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের বোঝার তৌফিক দান করুক।
জোবায়ের ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url