শারীরিক বিভিন্ন ব্যাধিতে উপকারী যেসব ফল
অনেক সময় আমাদের শরীর সাধারণ কিছু রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। যার কারণে আমাদের
ডাক্তারের নিকট শরণাপন্ন হতে হয়। তবে আমাদের জেনে থাকা ভালো, যে এসব সাধারন রোগ
বাড়িতে নিরাময় করা সম্ভব। আমাদের আশেপাশে সাধারণ সস্তা কিছু দেশিও ফল পাওয়া
যায়। যাতে থাকে প্রচুর প্রোটিন, ফাইবার ও শক্তি। যা খেয়ে আমরা বিভিন্ন রোগ থেকে
মুক্তি পেতে পারি।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ শারীরিক বিভিন্ন ব্যাধিতে উপকারী যেসব ফল
শরীর দুর্বল লাগবে কলা খান
কলা একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও শক্তিদায়ক ফল। কলাতে আছে ভিটামিন খনিজ ফাইবার ও
প্রাকৃতিক চিনি যা শরীরকে তৎক্ষণাৎ শক্তিশালী করে। যার কারণে দুর্বল মানুষদের
বেশি বেশি কলা খাওয়া উচিত। ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রম করতে যাওয়ার আগে
অবশ্যই কলা খাওয়া উচিত। তাহলে শরীরে শক্তি পাওয়া যাবে এবং কাজে মনোযোগ আসবে।
কলাতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বা আঁশ থাকায় কলা দ্রুত হজম করতে সহায়তা করে।
তাছাড়া কলার আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। তার মধ্যে, কলা রক্তের হিমোগ্লোবিন
বাড়াতে সাহায্য করে, কলা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে, কলা খেলে ত্বক ও চুল ভালো
থাকে। সব মিলিয়ে বলতে গেলে কলার প্রচুর উপকারিতা। তাই একজন অস্বাভাবিক মানুষ
যদি কলা খায়, সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
কলা খুব স্বাভাবিক ও কম দামি ফল হলেও কলার উপকারিতা আকাশচুম্বি। কিন্তু
বর্তমানে অনেকেই কলা খেতে চায় না। কলাকে সাধারণ ফল মনে করে কলা এড়িয়ে চলে।
তাদের কলার উপকারিতা জানা উচিত। তাদের জানা উচিত অনেক ছোট কিছু থেকেও অনেক ভালো
ফলাফল পাওয়া যায়। তাই দৈনন্দিন জীবনে কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক।
পেটে গ্যাস হলে ডাবের পানি খান
পেটে গ্যাস হলে ডাবের পানি খাওয়া খুবই উপকারী। পেটের গ্যাসের জন্য ডাবের পানি
ঘরোয়া ঔষধের মত কাজ করে। ডাবের পানি মূলত ক্ষারধর্মী পদার্থ, যা পেটের গ্যাসের
অম্লত্বের সাথে বিক্রিয়া করে পানি হয়ে যায়। তাই গ্যাস হলে যদি কেউ ডাবের
পানি খায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে নিরাময় পাওয়া যায়। তাছাড়া ডাবের পানির আরো
অনেক উপকারিতা রয়েছে। আমরা অনেকেই জানিনা ডাবের পানি কতটা উপকারী পদার্থ।
ডাবের পানি পেটের গ্যাস কমানোর সাথে সাথে আমাদের হজমেও সাহায্য করে। ডাবে
থাকা পটাশিয়াম হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখে, যার কারনে ঢেকুর ওঠা বা পেট ফাঁপার
সমস্যা থাকে না। ডাবের পানি শরীরের ভিতরে গিয়ে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখে। ফলে
প্রচন্ড গরমেও অস্বস্তি বোধ হয় না।
পেটে গ্যাস হলে শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দিতে পারে। এই রোগেরও সঠিক নিরাময় হল
ডাবের পানি যা শরীরে দ্রুত পানি স্বল্পতা কমাতে সাহায্য করে। গ্যাস বা বদহজমের
কারণে বমি বমি ভাব হতে পারে ডাবের পানি দ্রুত হজমে সাহায্য করে তা রোধ করে। সব
মিলিয়ে ডাবের পানি খুবই উপকারী একটি পদার্থ। ডাবের এসব উপকারিতা প্রত্যেকটা
মানুষের জানা উচিত।
আরো পড়ুনঃ হানিনাট খাওয়ার উপকারিতা
এলার্জির সমস্যায় কালোজিরা খান
এলার্জির সমস্যায় কালোজিরা খাওয়া খুবই উপকারী। কালোজিরাকে আরবি ভাষায় বলা
হয়েছে হাব্বাতুল বারাকাহ। কালোজিরার ভিতরে রয়েছে অসংখ্য রোগের ঔষধি গুণ। তাই
সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ ও কালোজিরা সেবন করতে পারে।
কালোজিরায় থাকা থাইমাকুইনন উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ফলে
এলার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থের প্রদুর্ভাব কমে যায়। অনেক সময় আমাদের নাক কান
বন্ধ হয়ে যায়। বুকে কফ জমে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তখন কালোজিরা উপকারিতা
অসীম। এক্ষেত্রে কালোজিরার গুনাগুন আকাশচুম্বি। এক কথায় এসব রোগের জন্য যদি
কালোজিরা ব্যবহার করা হয়, তাহলে অবশ্যই রোগ নিরাময় হবেই হবে।
আমরা যদি এসব রোগে আক্রান্ত হই, তাহলে অবশ্যই কালোজিরা সেবন করলে আমরা সুস্থ
হতে পারব। তবে বিভিন্ন অসুখে বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে এই কালোজিরা ব্যবহার করার।
শ্বাসকষ্টের সমস্যাই কাপড়ের মধ্যে কালোজিরা নিয়ে কাপড়টি ঘষে ঘষে কালোজিরা
গুঁড়ো করতে হবে, তারপর নাকের মধ্যে দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিলে শ্বাসকষ্ট
অনেকটা কমে আসবে। এলার্জির সমস্যা সরাসরি চিবিয়ে খেতে হবে।
হাড় শক্ত করতে টমেটো খান
হার শক্ত করার জন্য টমেটো খাওয়া খুবই উপকারী। টমেটোতে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ
পদার্থ রয়েছে যা হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে। তাই আমাদের শরীরের হাড় মজবুত
করার জন্য টমেটো খাওয়া খুবই উপকারী। টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও
ফসফরাস রয়েছে যা হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং হাড়ের ভাঙ্গন প্রতিরোধে
কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
টমেটোর প্রধান উপাদান এন্টিঅক্সিডেন্ট লাইকোপিন হাড়ের কোষে অক্সিডেটিভ স্টেট
কমায়। যার কারণে হাড়ের ক্যালসিয়াম সহজে ক্ষয় হয় না। যার ফলে আমাদের হাত-পা
ব্যথা করে না। তাই টমেটো খাওয়া খুবই উপকারী। যদিও টমেটো খুবই সস্তা একটি ফল।
তবে টমেটোর গুনাগুন অসম্ভব সুন্দর। তাই আমাদের নিয়মিত টমেটো খাওয়া উচিত। সেটা
কাঁচা হোক অথবা তরকারি হিসেবে। আবার টমেটো আমরা মেখেও খেতে পারি।
টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে থাকে। এই খনিজ পদার্থ শরীরের ভিতরে গিয়ে
হাড়ের খনিজ জমাতে সাহায্য করে। যার ফলে হার তুলনামূলক বেশি ঘন ও শক্তিশালী
হয়। কোলাজেন হল হাড়ের গঠনমূলক প্রোটিন। টমেটোতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন
সি। আর এই ভিটামিন সি কোলাজেন তৈরি করতে সহায়তা করে। তাই সবদিক থেকে টমেটো
উপকারী ফল।
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে চা খান
স্টোকের ঝুঁকি কমাতে প্রচুর পরিমাণে চা খাওয়া উচিত। তবে গবেষকরা বিশ্লেষণ করে
দেখেছে কালো চা ও সবুজ চা স্ট্রোকের ঝুঁকে কমাতে বেশি কার্যকরী। যেহেতু চা
স্টোকের ঝুঁকি কমায় তাই চা অবশ্যই উপকারী। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, চা
খাওয়ার সময় চায়ে অতিরিক্ত চিনি খাওয়া যাবে না। তাহলে লাভের চেয়ে ক্ষতি
বেশি হবে। তাই চায়ে চিনি খাওয়া উচিত নয়। তবে চায়ের কষ্টা ভাব কমাতে খুবই
সামান্য চিনি ব্যবহার করা উচিত। তাহলে চা খেতে রুচিসম্পন্ন হবে এবং শরীরেরও
তেমন কোন ক্ষতি হবে না।
চা খেলে রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয়। বিজ্ঞানের বহু প্রমাণ রয়েছে। চায়ে থাকা
ফ্ল্যাভোনয়েড নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট রক্তনালীর রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। যার
কারনে স্টোখের ঝুঁকিও থাকেনা। কারণ রক্ত জমাট বাধা স্টোকের ঝুঁকির মধ্যে অন্যতম
কারণ। পরিমিত চা পান করলে রক্তচাপ কমে যায়। বিশেষ করে গ্রিন টি। যা রক্তচাপ
কমানোর খুবই কার্যকরী একটি পদ্ধতি। রক্তচাপ হলো স্ট্রোকের ঝুঁকির অন্যতম কারণ
গুলোর মধ্যে একটি। যদি রক্তচাপ কম হয় তাহলে স্ট্রোকের ঝুঁকেও কমে যায়। তাই
সবুজ চা নিয়মিত পান করা উচিত।
সবুজ চা পান করলে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমে ও ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে।
তাই ধমনিতে চর্বি জমে হার্ট ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়। সবুজ চা
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরা। চায়ে থাকা ক্যাটেচিন, পলিফেনল ও অন্যান্য এন্টি
এক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকর রাডিকেল ধ্বংস করে যা কোষের ক্ষয় রোধ করে ও
মস্তিষ্কের রক্তনালি সচল রাখে।
ত্বক সুন্দর রাখতে লাউ খান
ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর রাখতে লাউ খাওয়া খুবই উপকারী। লাউয়ে রয়েছে অতিরিক্ত
পানি, ভিটামিন, খনিজ ও আন্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের ভিতর থেকে ত্বকের যত্ন নেয়।
তাই স্কিন সুন্দর রাখতে লাও খাওয়া জরুরী। লাউ শরীরকে ঠান্ডা রাখে। লাউয়ে ৯৬%
পানির থাকে। যার শরীরকে হাইড্রেট রাখে। যার ফলে ত্বক দেখতে উজ্জ্বল ও সুন্দর
লাগে।
লাউ শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। যার কারণে শরীরে ব্রণ,
ফুসকুড়ি ইত্যাদি জমাট বাধতে পারেনা। তাই লাউ খাওয়া খুবই উপকারী। লাউ খেলে
শরীরের কালচে ভাব কমে যায়।
অ্যান্টিএক্সিডেন্টে ভরপুর লাউ। নিয়মিত লাউ খেলে রক্তে বিষাক্ত পদার্থ কমে ও
রক্ত পরিশুদ্ধ থাকে। আর পরিশুদ্ধ রক্ত মানেই বিশুদ্ধ উজ্জ্বল ত্বক। লাউ খেলে
বাধ্যক্য রোধ হয়। তাই সব দিক থেকে লাউ খুব উপকারী।
লেখকের মন্তব্য
উপরোক্ত ফলগুলি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুবই উপকারী ভূমিকা পালন কর। যদিও ফলগুলো
বেশি দামি না। এসব ফল আমাদের বাড়ির উঠোনে চাষ করা যায়।
কিন্তু এদের উপকারিতা অনেক। এরা এমন কিছু রোগের চিকিৎসা দেয় যা বিজ্ঞান এখনো
বের করতে পারেনি। তাই নিয়মিত এসব ফল খেলে সুস্থ থাকা সম্ভব। খুব কম অসুস্থ ভর
করবে আমাদের শরীরে। তাই নিয়মিত সব ফল খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা চাই আমাদের শরীরকে সবসময় সুস্থ রাখতে। যেন সব সময় আমাদের অসুখ রেগে না
থাকে। সব সময় যেন আমাদের ডাক্তারের কাছে যাওয়া না লাগে। যদি সব সময় সুস্থ
থাকতে চাই নিয়ম মেনে এসব ফল খেলে আমরা সুস্থ থাকবো।
জোবায়ের ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url