নওগাঁয় ঘুরতে যাওয়ার জায়গা
নওগাঁয় ঘুরতে যাওয়ার জায়গার খোঁজ করতে গেলে আমাদের অনেক পুরনো নিদর্শন এর কথা মনে আসে। কারণ নওগাঁ জেলার ইতিহাস হাজার বছরের। এটি বাংলাদেশের পুরাতন জেলাগুলোর মধ্যে একটি। নওগায় ঘুরতে যাওয়ার মত অসাধারণ অনেক জায়গা আছে যেখানে ইতিহাস, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির অপরূপ সমন্বয় দেখা যায়। আমরা অনেকে নওগাঁ জেলায় বসবাস করলেও নওগাঁ জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানিনা। অনেকেই জানিনা নওগাঁ জেলায় ভ্রমণ করার মত অসংখ্য স্থাপত্য শৈলী রয়েছে। তাই আজকে আমরা জানবো নওগাঁ জেলার পুরাতন কিছু ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য শৈলী সম্পর্কে। যেগুলো হতে পারে আপনার বন্ধু ও পরিবারের স্মৃতিময় ভ্রমণের সেরা গন্তব্য।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ নওগাঁয় ঘুরতে যাওয়ার জায়গা
- নওগাঁ জেলার পুরাতন পর্যটন কেন্দ্র পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার
- মান্দা থানার কুুসুম্বা মসজিদ
- নওগাঁ সদরের দুবলহাটি রাজবাড়ি
- নওগাঁর বলিহার রাজবাড়ি
- নওগাঁর হাঁসইগাড়ি বিল
- নওগাঁর রক্তদহ বিল
- নওগাঁ ধামইরহাটের আলতাদিঘী জাতিয় উদ্যান
- পতিসর কাচারিবাড়ি বা রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি
- বদলগাছির জগদ্দল বিহার
- লেখকের মন্তব্য
নওগাঁ জেলার পুরাতন পর্যটন কেন্দ্র পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার
নওগাঁয় ঘুরতে যাওয়ার জায়গা খুঁজতে গেলে সর্বপ্রথম আমাদের মাথায় যে স্থানটির
নাম আসে সেটি হলো পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, যার আরেক নাম
সোমনাথ মহাবিহার। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ স্থাপনা। এটি
নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলায় অবস্থিত। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার কে ১৯৮৫ সালে
ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। প্রায় ৮০০ খ্রিস্টাব্দের
দিকে পাল রাজা ধর্মপাল এই মহাবিহার নির্মাণ করেন বলে ধারণা করা হয়।
এটি ছিল বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের শিক্ষা ও ধর্মচর্চার কেন্দ্র। এখানে নাকি বিভিন্ন দেশ
থেকে শিক্ষার্থীরা এসে ধর্ম ও দর্শন বিদ্যা শিখতেন। এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন,
বহু প্রাচীন মূর্তি, মাটির ফলক, নকশা খচিত ইট এবং বৌদ্ধ শিল্পের অসাধারণ নিদর্শন।
তাই নওগাঁয় ঘুরতে যাওয়ার জায়গার তালিকা করতে গিয়ে প্রথমেই পাহাড়পুর
বৌদ্ধবিহারকে রাখা হয়েছে। এখানে ঘুরতে গেলে আপনি দেখতে পাবেন মাটির অসংখ্য
পুরাতন নিদর্শন। তাই আমরা যারা নওগাঁ জেলায় বসবাস করি তাদের একবার হলেও
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার থেকে ভ্রমণ করে আসা উচিত।
মান্দা থানার কুুসুম্বা মসজিদ
নওগাঁয় ঘুরতে যাওয়ার জায়গার তালিকা করতে গেলে দ্বিতীয় যে জায়গাটির নাম
মাথায় আসে সেটি হলো মান্দা থানার কুসুম্বা মসজিদ। এটি নওগাঁ জেলার সবচেয়ে
ঐতিহাসিক ও নান্দনিক স্থাপত্যর মধ্যে একটি। এটি নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলায়
অবস্থিত। ধারণা করা হয় ১৬০০ শতকের মাঝামাঝি সুলতানি আমলে কুসুম্বা মসজিদ নির্মিত
হয়। সেসময়ের বিখ্যাত সৈনিক জরিপ খা এই মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে ধারণা করা
হয়।। কারণ এই মসজিদে মুঘল ও সুলতানি বংশের শৈল সামগ্রীর সমন্বয় লক্ষ্য করা
যায়।
আরো পড়ুনঃ নওগাঁ জেলার সেরা ফ্রিল্যান্সার
কুসুম্বা মসজিদ কালো পাথর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বলে, এই মসজিদটিকে অনেকে কালো
পাথরের মসজিদ নামেও ডাকে। এই মসজিদটিতে মোট ছয়টি গম্বুজ এবং চার কোনে চারটি
মজবুত মিনার রয়েছে। যা কুসুম্বা মসজিদের সৌন্দর্য কয়েক গুণ বাড়িয়ে তুলেছে।
তবে কুসুম্বা মসজিদের সামনে থাকা বিশাল দিঘী এর সৌন্দর্য আরো বর্ধিত করে তুলেছে।
তাই যারা মনোরম পরিবেশ পছন্দ করেন, তারা অবশ্যই কুসুম্বা মসজিদ ঘুরে আসতে পারেন।
এখানকার শান্ত পরিবেশ ও ঠান্ডা হাওয়া আপনার মন জুড়িয়ে দিবে। নওগাঁ ভ্রমণে
কুসুম্বা মসজিদের শান্ত পরিবেশ ও ঐতিহ্যের ছোঁয়া আপনার মনে দীর্ঘদিন স্মৃতি হয়ে
থাকবে।
নওগাঁ সদরের দুবলহাটি রাজবাড়ি
নওগায় ঘুরতে যাওয়ার জায়গার কথা মাথায় আসলে আমাদের আরো একটি পরিচিত স্থাপত্যের
নাম মাথায় আসে সেটি হলো দুবলহাটি রাজবাড়ী। দুবলহাটি রাজবাড়ী নওগাঁ জেলার একটি
ঐতিহাসিক ও চোখ ধাঁধানো স্থাপত্যের নিদর্শন। এটি নওগাঁ সদর উপজেলায় অবস্থিত।
ধারণা করা হয় এই রাজবাড়ীটি ১৮০০ শতকের দিকে স্থানীয় জমিদার পরিবারের আবাসস্থল
ছিল। ধারণা করা হয় দুবলহাটির জমিদার হেমন্তরঞ্জন রায়ের পূর্বপুরুষরা এই
রাজবাড়ীটি তৈরি করেছিলেন। এই রাজবাড়ীটির স্থাপত্য শৈলীতে ইউরোপীয় ও ভারতীয়
স্থাপত্যের মিশ্রণ দেখা যায়। সুবিশাল এলাকা জুড়ে থাকা প্রাসাদে রয়েছে
দৃষ্টিনন্দন বারান্দা, অলংকৃত দরজা ও জানালা, প্রশস্ত উঠান ও রাজবাড়ির সামনে
বিশাল এক পুকুর। যা রাজবাড়ীর সৌন্দর্য বর্ধন করেছে।
নওগাঁ সদরের দুলহাটি রাজবাড়ীটি জমিদার আমলের অভিজাত্যের স্মৃতি ধারণ করে
দাঁড়িয়ে আছে। এটি আমাদের নওগাঁ জেলার একটি সম্পদ। তবে বর্তমানে এ রাজবাড়ীটি
যত্নের অভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবছর
বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সমাগমে নওগাঁ জেলা সহ অন্যান্য জেলার মানুষ এই
রাজবাড়ীতে সমাগম করে। নওগাঁ ভ্রমণে ইতিহাস, স্থাপত্য ও ঐতিহ্যে যারা ভালবাসেন
তাদের জন্য দুবলহাটি রাজবাড়ী নিঃসন্দেহে একটি দারুন দর্শনীয় স্থান। আপনারা যারা
ভ্রমণ প্রেমি তারা গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন দুবলহাটি রাজবাড়ী থেকে।
নওগাঁর বলিহার রাজবাড়ি
নওগাঁয় ঘুরতে যাওয়ার জায়গার মধ্যে পারফেক্ট একটি জায়গা হলো বলিহার রাজবাড়ী।
নওগাঁ জেলার একটি মনোরম ও ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নিদর্শন বলিহার রাজবাড়ী। বলিহার
রাজবাড়ী নওগাঁ সদরে থেকে একটু দূরে অবস্থিত। বলিহার রাজবাড়ীটি তৈরি করা হয়
উনবিংশ শতাব্দীর দিকে। এটি ছিল মূলত বলিহার জমিদারদের বসবাসের আবাসস্থল। শোনা
যায়, জমিদার পরিবারটির জনকল্যাণমূলক কাজ ও সাংস্কৃতিক অবদানের জন্য এলাকা জুড়ে
সুনাম ছিল। বলিহার রাজবাড়ীটিতে ইউরোপীয় ও দেশীয় নির্মাণশৈলীর দারুন সমন্বয়
ফুটে উঠেছে।
বলিহার রাজবাড়ির সামনে রয়েছে নবরত্ন ধাঁজের মন্দির ও সুন্দর বাগান যা
রাজবাড়ীটির সৌন্দর্য দ্বিগুণভাবে ঘটিয়ে তুলেছে। বলিহার রাজবাড়ীর পুকুর, ফটক ও
আশেপাশের সবুজ পরিবেশ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে তোলে। যদিও সময়ের প্রভাবে ও
রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রাজবাড়ীটির কিছু অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। তারপরেও নওগাঁর
ইতিহাস ও ঐতিহ্যপ্রেমীদের জন্য বলিহার রাজবাড়ী একটি আকর্ষণীয় স্থান। বিশেষ উৎসব
ও ছুটির সময় বলিহার রাজবাড়ীতে জনগণের সমাগম লেগে থাকে। তাই আমরা যারা নওগাঁয়
বাস করি ও নওগাঁর বাহিরে থাকি তাদের জন্য বলিহার রাজবাড়ী একটি দর্শনীয় স্থান।
নওগাঁর হাঁসইগাড়ি বিল
নওগাঁয় ঘুরতে যাওয়ার জায়গার তালিকা করতে গেলে আরও যে একটি ভাইরাল জায়গার কথা
মাথায় আসে সেটি হলো হাঁসাইগাড়ি বিল। হাঁসাইগাড়ি বিল নওগাঁ জেলার আত্রাই থানায়
অবস্থিত। এটি নওগাঁ জেলার একটি মনোরম প্রাকৃতিক জলাভূমি। এটি স্থানীয়ভাবে হাঁস,
অন্যান্য জলচর পাখি ও নৌকা ভ্রমণের জন্য বেশ জনপ্রিয়। বিস্তীর্ণ এই বিল বর্ষা ও
বর্ষার পরের মৌসুমে পানিতে ভরে ওঠে। তখন এর সৌন্দর্য যেন আরো বেড়ে যায়। সবুজ
শাপলা, শালুক, জলজ উদ্ভিদ ও গ্রামের স্বাভাবিক জীবন এই বিলে এক অপূর্ব সৌন্দর্য
সৃষ্টি করে।
আরো পড়ুনঃ কম্পিউটারের বেসিক শেখার উপায়
শীতকালে এখানে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসে। তাই পাখি প্রেমীদের জন্য
হাঁসাইগাড়ি বিল যেন এক অপূর্ব সৌন্দর্যের স্থান। সূর্যাস্তের সময় নৌকা ভ্রমণ
করলে প্রাকৃতির শান্ত সৌন্দর্য মনকে ছুঁয়ে যায়। মাছ ধরার দৃশ্য ও বিলের চারপাশে
গ্রামীণ পরিবেশ পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ। তাই শান্ত নিরিবিলি ও প্রাকৃতিক
সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি হাসাইগাড়ী বিলকে প্রত্যেকটা মানুষের উপভোগ করা উচিত।
তাই যারা নওগাঁর আশেপাশে বসবাস করে তাদের একবার হলেও হাসাইগাড়ী বিল ঘুরে আসা
উচিত।
নওগাঁর রক্তদহ বিল
রক্তদহ বিল নওগাঁ জেলার একটি সুন্দর ইতিহাস ঘেরা জলাভূমি। রক্তদহ বিল নওগাঁ জেলার
মান্দা উপজেলায় অবস্থিত। রক্তদহ বিল এই নামের মধ্যে রয়েছে এক রহস্য। স্থানীয়রা
মনে করেন প্রাচীনকালে বিশাল এক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এই বিলে। যার ফলে মানুষের
রক্তে এই বিলের পানির রং লাল হয়ে গিয়েছিল। তখন থেকেই এই বিলের নাম রক্তদহ বিল।
যদিও এটি একটি সামাজিক কুসংস্কার ও ঐতিহাসিক কাহিনী। তবে বিলের এই নামই বিলটিকে
আলাদা আকর্ষণ এনে দিয়েছে।
বিলটি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক চমৎকার ভ্রমণ স্থান। বর্ষা মৌসুমে বিল প্যানিতে
ভরে থাকে, যার কারণে তখন নৌকা ভ্রমণ খুবই মজাদার একটি অভিজ্ঞতা। শীতকালে এই বিলে
নানা প্রজাতির পাখি এসে আশ্রয় নেয়। যা পাখি প্রেমিক পর্যটকদের কাছে খুবই
উপভোগ্য বিষয়। চারিদিকে সবুজ প্রকৃতি, কৃষিজমি ও গ্রামীণ পরিবেশ সব মিলিয়ে
রক্তদহ বিল একটি শান্ত পরিবেশ উপহার দেয়। তাই যারা প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটক রয়েছে
তাদের কাছে রক্তদহ বিল যেন এক সৌন্দর্য বর্ধিত পর্যটন কেন্দ্র। নওগাঁ জেলার যেসব
ভ্রমণপ্রেমী রয়েছে তাদের একবার হলেও রক্তদহ বিল ভ্রমণ করে দেখা উচিত।
নওগাঁ ধামইরহাটের আলতাদিঘী জাতিয় উদ্যান
নওগাঁয় ঘুরতে যাওয়ার জায়গার তালিকা করতে গেলে লিস্টে যে নামটি রাখতেই হবে সেটি
হলো আলতা দিঘী জাতীয় উদ্যান। আলতা দিঘি জাতীয় উদ্যান নওগাঁ জেলার ধামইরহাট
উপজেলায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম ও সুন্দর জীব বৈচিত্র্যপূর্ণ বনভূমি।
প্রতিদিন এখানে দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শক প্রকৃতির সৌন্দর্য
উপভোগ করতে আসে। এটি বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জাতীয় উদ্যান গুলোর একটি এবং
ভারতের সীমানার একদম কাছাকাছি হওয়ার কারণে ভৌগোলিকভাবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
২০১১ সালে এই এলাকাকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
উদ্যানটির মূল আকর্ষণ হলো আলতা দিঘী। আলতা দিঘি এক বিশাল মিঠা পানির জলধার। যার
নামেই পুরো উদ্যানের নামকরণ করা হয়েছে। শীতে এই দিঘী ও আশেপাশের বনে অসংখ্য
পরিযায়ী পাখি আসে। যা পাখি প্রেমীদের কাছে খুবই উপভোগ্য। এখানে রয়েছে শাল
গর্জনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা। এখানকার বিশেষ আকর্ষণ হলো হরিণ, বানর, শিয়াল,
বন বিড়ালসহ নানা বন্যপ্রাণী। হাঁটার পথ, বিশ্রামাগার এবং নৌকা ভ্রমণের সুবিধা
থাকায় পর্যটকদের জন্য এটি একটি দারুণ গন্তব্য। ইতিহাস ও প্রকৃতি একসাথে উপভোগ
করতে চাইলে আলতা দীঘি জাতীয় উদ্যান ভ্রমণের তালিকায় রাখা উচিত।
পতিসর কাচারিবাড়ি বা রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি
প্রতিসর কাচারিবাড়ি বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি নওগাঁ জেলার একটি দর্শনীয়
স্থান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলায় অবস্থিত। এটি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পারিবারিক সম্পত্তি হিসেবে পরিচিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের
পারিবারিক ইতিহাস ও আত্মজীবনী অনুযায়ী তিনি বহুবার বদলগাছির কুঠিবাড়ি ভ্রমণ
করেছেন। এই স্থানের প্রাকৃতিক পরিবেশ, নৈসরিক সৌন্দর্য ও গ্রামীণ জীবন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্মে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। কুঠিবাড়ি অঞ্চলে
স্থাপত্য গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্য ফুটে উঠেছে। সাদামাটা প্রাচীর, খড়ের ছাউনি,
বারান্দা এবং চারপাশের সবুজ উদ্যান দর্শনীয়।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বদলগাছিতে মানুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়িটি দেখতে
আসে। পর্যটকরা এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের ইতিহাস, স্থাপত্য ও গ্রামীণ
জীবন সম্পর্কে ধারণা পায়। যার কারণে প্রচুর পরিমাণে দর্শক এখানে সমাগম করে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ এবং ছবি তোলার জন্য এটি একটি চমৎকার স্থান। বিশেষ করে
আমরা নওগাঁ জেলার মানুষ তারা ঐতিহ্যের এই সাক্ষী রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়িকে দেখতে
আসতে পারি।
বদলগাছির জগদ্দল বিহার
জগদ্দল বিহার নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক বৌদ্ধ বিহার।
এটি প্রাচীনকালে বৌদ্ধ ধর্মীয় চর্চা ও শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রায়
৮০০ খ্রিস্টাব্দে পাল রাজবংশের শাসনামলে এই বিহার প্রতিষ্ঠিত হয় বলে ধারণা করা
হয়। বিহারটির স্থাপত্যে দেখা যায় প্রাচীন বৌদ্ধ মূর্তি, ফলক্ষচিত ইট, এবং
চতুষ্কোণাকার গঠিত বৌদ্ধ চত্বর। এটি স্থানীয়ভাবে জগদ্দল বিহার নামেই পরিচিত।
এখানে খনন কাজে পাওয়া নিদর্শন গুলো বাংলাদেশের প্রাচীন বৌদ্ধ সভ্যতার
গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী বহন করে।
জগদ্দল বিহার শুধুমাত্র ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য নয় বরং পর্যটক ও
গবেষকদের জন্য আকর্ষণীয়। এখানে এসে দর্শনার্থীরা প্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপত্য,
স্থাপত্যশৈলী এবং প্রকৃতিক পরিবেশের এক অনন্য সমন্বয় উপভোগ করতে পারে। তাই আমরা
যারা নওগাঁ জেলার ভিতরে এবং বাহিরে থাকি তাদের জগদ্দল বৌদ্ধ বিহার ভ্রমণ করে দেখা
উচিত। কারণ এটি আমাদের ঐতিহ্যের স্মৃতি বহন করে। সব মিলিয়ে জগদ্দল বৌদ্ধ বিহার
ভ্রমণ করলে মোটামুটি অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে।
লেখকের মন্তব্য
নওগাঁ শুধু একটি জেলা নয়, এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির এক অনন্য মেলবন্ধন।
প্রতিটি দর্শনীয় স্থানই নিজের বুকের মধ্যে একটি গল্প লুকিয়ে রেখেছে। সোমপুর
মহাবিহার আমাদের প্রাচীন সভ্যতার সাক্ষী। রাজবাড়ীগুলো জমিদারদের জীবনচিত্র
ফুটিয়ে তোলে আর বিল ও জলাভূমি প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বপ্নের ঠিকানা। নওগাঁয় ঘুরতে
গেলে শুধু দর্শনীয় স্থান দেখাই নয়, স্থানীয় মানুষের জীবনধারা, ঐতিহ্য এবং
গ্রামের শান্তি ও সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
ভ্রমন পিপাসুদের জন্য নওগাঁ এমন এক জায়গা যেখানে ইতিহাস ও প্রকৃতির সঙ্গে
একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ মিলে। জীবনে শান্তি ও আনন্দের অভিজ্ঞতা এনে দেয়। তাই
আমরা যারা নওগাঁ জেলার বাহিরের মানুষ, তাদের অবশ্যই একবার হলেও নওগাঁ জেলা ঘুরে
দেখা দরকার। আর আমরা যারা নগর ভিতরে থাকি তাদের নওগাঁর এই ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলো
পরিদর্শন করা দরকার। আশা করা যায়, নওগাঁর এই ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলো ভ্রমণ করলে
ভ্রমণ পিপাসুদের মনে তৃপ্তি আসবে।



জোবায়ের ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url