ছা্ত্র অবস্থায় ইনকাম করার সেরা পাঁচটি উপায়
আমাদের সবারই ইচ্ছা থাকে কিভাবে ছাত্র অবস্থায় ইনকাম করা যায়। তবে এটা ভাবা অনেক সহজ কিন্তু করাটা অনেকটা কঠিন। তবে যারা নিজের স্কিল এর উপর বিশ্বাস রেখে কাজ করে, তাদের জন্য এটা মোটেও কঠিন নয়। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের স্বপ্ন তারা পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের পরিবারকে সাহায্য করবে। তাদের জন্য আজকের এই ব্লগটি। যারা স্টুডেন্ট অবস্থায় ইনকাম করার স্বপ্ন দেখেন।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ ছা্ত্র অবস্থায় ইনকাম করার সেরা ৫ টি উপায়
- টিউশনি করা
- ফ্রিল্যান্সিং
- ব্লগিং করা
- ড্রপশিপিং বিজনেস করা
- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
- লেখকের মন্তব্য
টিউশনি করা
ছাত্র অবস্থায় ইনকামের প্রথম ও সহজ ধাপ হলো টিউশনি করা। আপনি খোঁজাখুঁজি করলে
সহজেই একটি টিউশনি পেয়ে যাবেন। একটি টিউশনি থেকে যদি আপনি ৫০০০ টাকা করে পান,
তাহলে এই টাকা দিয়ে আপনি আপনার পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নিতে পারবেন। তাই ছাত্র
অবস্থায় আয়ের এই ধাপটা খুবই সুন্দর। ছাত্র অবস্থায় আয় করার প্রতিটা লোকেরই
স্বপ্ন। এই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেয়ার জন্যই আমার এই কনটেন্ট দেওয়া। টিউশনি
নিয়ে আরো আলোচনা করা যাক চলুন।
টিউশনি করতে গিয়ে আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে, যারা অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলে
সেটা হলো টিউশনিকে পার্ট টাইম জব হিসেবে না নিয়ে ফুল টাইম হিসেবে নিয়ে ফেলে।
ভাবছেন কিভাবে, চলুন আপনাদেরকে বুঝাই, অনেকে মনে করে একটা টিউশনি করে আমি পাঁচ
হাজার টাকা পাচ্ছি, তাহলে আমি যদি দশটা টিউশনি করাই তাহলে আমি মাসে ৫০ হাজার
টাকা ইনকাম করতে পারব। যার কারণে টিউশনিটা হয়ে যায় ফুল টাইমের জন্য। এই ফুল
টাইম টিউশনি করাতে গিয়ে আপনি নিজের স্কিলকে আর ডেভলপ করতে পারবেন না। যার
কারণে সে ওই পঞ্চাশ হাজার টাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।
টিউশনি পড়াতে গেলে এই ভুলটা কখনোই করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, টিউশনিটা পার্ট
টাইম এর জন্য নিতে হবে। তাহলে হবে কি, আপনি নিজের স্কিল আরো ডেভলপ করতে পারবেন
বাকি সময়ে। আর আপনি যদি, বাকি সময়ে সঠিকভাবে একটা স্কিল ডেভলপ করেন পরবর্তীতে
আপনি ওই পঞ্চাশ হাজার থেকে বেশি ভালো একটা আমাউন্ট ইনকাম করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ বাংলা আর্টিকেল লিখার নিয়ম
ফ্রিল্যান্সিং
ফ্রিল্যান্সিং এমন একটি সেক্টর যেখান থেকে অনেক কিছু করা সম্ভব। তাই
ছাত্র অবস্থায় আয় করার দ্বিতীয় যে টপিক আমরা রেখেছি, সেটাতে ফ্রিল্যান্সিংকে
প্রাধান্য দিয়েছি। ফ্রিল্যান্সিং করে অনেকেই ইনকাম করছে। তবে এটা কি খুব সহজ
সেক্টর? এখান থেকে ইনকাম করা কি খুব সহজ? ছাত্র অবস্থায় আপনি কি এখান থেকে
ইনকাম করতে পারবেন? এসব প্রশ্ন আমাদের মধ্যে ঘুরপাক খেতেই থাকে। আমি এক কথায়
আপনাদের এই সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিচ্ছি।
হ্যাঁ, আপনি এটা অবশ্যই পারবেন। সব কাজই কঠিন, তবে ধৈর্য সহকারে নিজের স্কিল
ডেভেলপ করলে কোন কাজই কঠিন নয়। ছাত্র অবস্থায় ফ্রিল্যান্সিং করা সব থেকে
বুদ্ধিমানের কাজ। তবে এই সেক্টরে আপনাকে তিন থেকে চার মাস সময় ব্যয় করতে হবে।
এই তিন থেকে চার মাসে আপনি একটি ভাল স্কিল ডেভলপ করবেন। হোক সেটা গ্রাফিক্স
ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ভিডিও এডিটিং কিংবা অন্য যেকোনো কিছু হতে পারে।
প্রথমে তিন চার মাস সময় ব্যয় করে, আপনি যে কোন একটি স্কিল রপ্ত করতে পারলে
এটি আপনার জীবন বদলে দিবে। আপনি এমন পরিমাণ ইনকাম করতে পারবেন যা আপনি কখনো
ধারণা করেননি।
এই স্কিল রপ্ত করার পর। আপনি অনেক উপায় ইনকাম করতে পারবেন। তার মধ্যে প্রধান
একটি হলো জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস থেকে ইনকাম যেমন ফাইবার,
আপওয়ার্ক আরো অনেক জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস রয়েছে। মার্কেটপ্লেসের পাশাপাশি
আপনি নিজের একটি ব্যবসা দাঁড় করাতে পারবেন। নিজে উদ্যোক্তা হতে পারবেন।
পাশাপাশি আপনি ফ্রিল্যান্সিং শিখিয়েও ইনকাম করতে পারবেন।
ব্লগিং করা
বর্তমান সময়ের সব থেকে জনপ্রিয় বিষয় হয়ে যেটি দাঁড়িয়েছে সেটি হলো, ভিডিও
বানিয়ে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় সেগুলো শেয়ার করা। যা বর্তমানে ব্লগিং নামে
পরিচিত। বর্তমানে ডিজিটাল এই দুনিয়ায় ভাইরালের উপরে কোন কিছু নাই। তাই আপনার
উচিত বর্তমান দুনিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে ভিডিও বানানো এবং সেগুলো সোশ্যাল
মিডিয়া শেয়ার করা। যদি মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন, তাহলে কিছুদিনের
ভিতরেই আপনার কনটেন্ট ভাইরাল হওয়া শুরু করবে।
কিন্তু ভাবছেন, তাতে আমার কি লাভ? বর্তমানে ব্লগিং করে এত পরিমান ইনকাম করা
যায়, যা আপনি কখনো ধারণাও করতে পারবেন না। তাই ছাত্র অবস্থায় ইনকামের জন্য,
অবশ্যই আপনার ব্লগিং জগতে যাওয়া উচিত। ব্লগিংয়ের জন্য সবথেকে জনপ্রিয়
কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম হল ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ও
লিঙ্কদিন। তবে এগুলোর মধ্যে ফেসবুক ও ইউটিউব বেশি জনপ্রিয়। বাকিগুলোর তুলনায়
এগুলোতে বেশি ভিউ পাওয়া যায়। মানসম্মত কনটেন্ট হলে তাড়াতাড়ি ভাইরাল হওয়া
যায়।
ফেসবুকে ইনকামের জন্য আপনার পছন্দের বিষয়ে ভিডিও তৈরি করে সেখানে বিজ্ঞাপন ও
অ্যাফিলিয়েট লিংক এর মাধ্যমে আয় করতে পারবেন। তাছাড়া আপনি ইউটিউবে ভিডিও
বানিয়ে আপলোড করে বিজ্ঞাপন থেকে আয় করতে পারবেন এবং এখান থেকে মোটামুটি ভালো
পরিমাণের ইনকাম জেনারেট হবে। তাই ছাত্র অবস্থায় ব্লগিং করা সবথেকে ভালো
বুদ্ধি। বর্তমানে এই ডিজিটাল দুনিয়ায় যদি আপনার একটা ইউটিউব চ্যানেল থাকে
অথবা একটি ফেসবুক পেজ থাকে, তাহলে সেই চ্যানেলে বা পেজে অ্যাফেলিয়েট অর্থাৎ
অন্যদের ব্যবসার লিংক শেয়ারের মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন। তাই ছাত্র অবস্থায়
ব্লগিং করা এবং একটি ফেসবুক পেজ অথবা ইউটিউব চ্যানেল দার করানো সব থেকে
বুদ্ধিমানের কাজ।
আরো পড়ুনঃ শারীরিক বিভিন্ন ব্যাধিতে উপকারী যেসব ফল
ড্রপশিপিং বিজনেস করা
আমরা সাধারণত বাংলাদেশিরা ড্রপ শিপিং বিজনেস এর সাথে খুব একটা পরিচিত না। যার
কারণে চার নম্বর আইডিয়াতে ড্রপশিপিং বিজনেস দেখে আপনি কনফিউস, যে ড্রপিংটা
আবার কি? ড্রপশিপিং হল এমন একটা বিজনেস যা ছাত্রদের জন্য খুবই খুবই উপকারী এবং
সহজ উপায় ছাত্র অবস্থায় ইনকাম করার জন্য।
চলুন আপনাদেরকে বুঝিয়ে বলি, ড্রপ শিপিং কি? মনে করেন আপনার একটি ফেসবুক পেজ
আছে, সেখানে আপনি মধু বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু আপনার কাছে ব্যবসায়
ইনভেস্ট করার মত কোন টাকা পয়সা নেই। এখন আপনি কি করবেন? হ্যাঁ ,এখন আপনি
ড্রপশিপিং করবেন। আপনি নিজের ফেসবুক পেজে মধু সম্পর্কে পোস্ট করবেন।ধরুন, আপনার
ফেসবুক পেজের পোস্ট দেখে, আপনার কাছে কেউ অর্ডার করলো, যে ভাই আমার এক কেজি মধু
দরকার।
এখন আপনি মধুর বাজার দর দেখবেন, ধরুন মধু ৮০০ টাকা কেজি, এখন আপনি
কাস্টমারকে বলবেন, আমার মধু ৯০০ টাকা কেজি। তাহলে কেজিতে আপনার ১০০ টাকা লাভ
থাকলো। এখন আপনি আপনার এলাকার মধ্য বিক্রেতার কাছ থেকে এক কেজি মধু নিয়ে ভালো
করে প্যাকেট করে পাঠিয়ে দিবেন, এটাই ড্রপশিপিং। এই ড্রপশিপিং বিজনেস
আপনি যে কোন পণ্য নিয়ে করতে পারেন। আমি শুধু মধু দিয়ে একটা এক্সাম্পল দিলাম
দিলাম। ছাত্র অবস্থায় এই ড্রপ শিপিং বিজনেস দাঁড় করানো খুবই ভালো একটা
আইডিয়া।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
আমার ওপিনিয়ন থেকে ছাত্র অবস্থায় ইনকাম করার সবথেকে ভালো উপায় হলো
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা, তাই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংকে পাঁচ নম্বরে রাখা
হয়েছে। আমরা অনেকে জানি আফিলের মার্কেটিং সম্পর্কে কারণ বর্তমান সময়ে একটি
ডিমান্ডেবল সেক্টর হল আফিলিয়েট মার্কেটিং। আবার অনেকেই অ্যাফিলিয়েট সম্পর্কে
জানি না। তাদের জন্য বিস্তারিত জানানো হলো
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য আপনার একটা ফেসবুক পেজ অথবা একটা ইউটিউব
চ্যানেল দরকার। যেখানে আপনার মোটামুটি সাবস্ক্রাইবার বা ফলোয়ার থাকলেই চলবে।
এখন আপনার করণীয় হলো, অনলাইনে বিভিন্ন বড় বড় সুপার শপ রয়েছে যেমন দারাজ।
এরকম বড় বড় ওয়েবসাইট থেকে আপনি তাদের পণ্যের লিঙ্ক আপনার ফেসবুক পেজ বা
ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করবেন। এগুলো প্রচার করলে, ওই লিংকে ক্লিক করে যদি কেউ
পণ্য কিনে, তাহলে সেই মার্কেট আপনাকে ঐ পুণ্য বিক্রি করে দেওয়ার জন্য একটা
কমিশন দিবে। যদি আপনি ৫০ টা পণ্য বিক্রি করিয়ে দিতে পারেন, তাহলে মোটামুটি
ভালো একটা ইনকাম জেনারেট হবে।
এক কথায় নিজের ফেসবুক পেজ বা ইউটিউব চ্যানেলে নিজের অডিয়েন্স এর কাছে একটি
পণ্য বিক্রি করে দেওয়ার ফলে যে কমিশন পাবেন তাই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। তবে
এটার জন্য আপনার প্রথমে যেটা দরকার পড়বে সেটা হলো, আপনার ফেসবুক পেজ বা ইউটিউব
চ্যানেল।
আরো পড়ুনঃ হানিনাট খাওয়ার উপকারিতা
লেখকের মন্তব্য
ছাত্র অবস্থায় ইনকাম করার জন্য অবশ্যই আপনার মনে তীক্ষ্ণ বিশ্বাস থাকতে হবে।
সেই বিশ্বাসের উপর ভর করে, তিন মাস সময় দিয়ে, একটা স্কিল ডেভেলপ করে আপনাকে
এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে ছাত্র অবস্থায় কিছু না হলেও নিজের খরচ বা পড়াশোনার
খরচ নিজে চালিয়ে নিতে পারবেন। এটি মূলত মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জন্য
খুবই জরুরী।
বাংলাদেশের বর্তমানে যে চাকরির বাজার, তাতে পড়াশোনা শেষে চাকরি পাওয়াটা খুবই
টাফ একটা বিষয়। তাই ছাত্র অবস্থায় যদি কেউ ইনকামের একটি সোর্স তৈরি করে রাখতে
পারে, তাহলে অবশ্যই পরবর্তীতে সে বড় ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে
পারে।
একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান যদি, নিজের পড়াশোনার খরচ নিজে চালাতে পারে,
তাহলে বাবা-মার উপর থেকে বড় একটি চাপ কমে যায়। তাই আমাদের সকলের এসব বিষয়ের
উপর চিন্তা রেখে ছাত্র অবস্থায় ইনকামের একটি সোর্স তৈরি করা উচিত।



জোবায়ের ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url